রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার ইউরোপের অন্যতম বড় সমর্থন পেল ইউক্রেন। দেশটির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য পদ পাওয়ার পথ খুলে গেল। ফলে ইউরোপের দেশগুলো থেকে ইউক্রেনে সামরিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তা জোরদারের পথ উন্মুক্ত হলো। আর এর মধ্য দিয়ে ইউক্রেন পরিস্থিতি ঘিরে বৈশ্বিক মেরুকরণ আরো স্পষ্ট হলো।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি ইইউতে দেশটির সদস্য পদ পেতে আনুষ্ঠানিক আবেদন করেন গত সোমবার। পরদিনই গতকাল ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে ব্রাসেলসে ইইউ সদর দপ্তরে বিশেষ অধিবেশনে বসে। সেখানে এই আবেদনকে স্বাগত জানিয়ে রাশিয়ার কঠোর সমালোচনা করা হয়। অধিবেশনে ভিডিওলিঙ্কের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ভাষণ দেন জেলেনস্কি।

এদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনা আজ বুধবার আবার শুরু হতে পারে। গত সোমবার আলোচনার প্রথম দিনে কোনো পক্ষ থেকে অগ্রগতির কথা জানানো হয়নি। পাঁচ ঘণ্টা ধরে ওই আলোচনা চলে।

ইউক্রেনে রুশ হামলার আভাস পাওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ রাষ্ট্রগুলো এর বিরোধিতা করে আসছিল। হামলা শুরুর পর এই দেশগুলো মস্কোর বিরুদ্ধে একের পর এক অবরোধ দিতে থাকে। বিশ্বব্যাপী ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন বাড়তে থাকে। কিন্তু কোনো কিছুকে তোয়াক্কা না করে রাশিয়া হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইউক্রেনে হামলার পর থেকে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলে আসছিলেন, এই হামলাকে কেন্দ্র করে বিশ্বে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। এতে একঘরে হয়ে পড়বে রাশিয়া। গতকাল ইইউ পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনের মধ্য দিয়ে সেই মেরুকরণই স্পষ্ট হয়ে উঠল। প্রকাশ্যে রাশিয়ার সঙ্গে থাকা কিংবা কোনো ধরনের সহায়তা দেওয়ার কথা কোনো দেশ বলেনি। চীন এই হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উসকানিকে দায়ী করলে সরাসরি কোনো অবস্থান তুলে ধরেনি। যদিও জাতিসংঘে রাশিয়ার প্রতি নিন্দা জানাতে নিরাপত্তা পরিষদে তোলা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিতে চীন, ভারত ও আরব আমিরাত ভোট দানে বিরত থাকে। এদিকে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে শুধু বেলারুশ তার ভূখণ্ড ও আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিচ্ছে রাশিয়াকে।

অন্যদিকে শুরু থেকেই এই হামলার বিরোধিতা করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইইউ রাষ্ট্রগুলো। মস্কোর বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অবরোধ দেওয়ার পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে আকাশসীমাও বন্ধ করে দিয়েছে কোনো কোনো দেশ।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, ইইউ পার্লামেন্টের এই বিশেষ অধিবেশনের মধ্য দিয়ে ইইউতে ইউক্রেনের প্রবেশের দরজা খুলে গেছে। তবে আগামীকালই ইউক্রেন ইইউর সদস্য পদ পেয়ে যাবে, বিষয়টি এমন নয়। যদিও ইউক্রেনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে যে দ্রুত সদস্য পদ দেওয়ার জন্য বিশেষ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হোক।

 

জেলেনস্কি ইইউ পার্লামেন্টে ভাষণে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের প্রমাণ করতে হবে যে তারা ইউক্রেনের সঙ্গেই আছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দৃঢ়তার প্রমাণ দিয়েছি। এখন প্রমাণ করুন, আপনারা আমাদের ছেড়ে যাননি। ’

রাশিয়ার কঠোর সমালোচনা

বিশেষ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিচেল ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলাকে ‘নিষ্ঠুরতা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘জঘন্য ধরনের মিথ্যার’ ওপর নির্ভর করে এই হামলা চালানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মস্কো ভূ-রাজনৈতিক সন্ত্রাসবাদ চালিয়েছে। ইইউর সদস্য পদ পেতে ইউক্রেনের আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ জন্য কঠিন কাজ করতে হবে। ইউরোপে নানা ধরনের মত রয়েছে। ’ তবে ইউক্রেনের আবেদনকে বৈধ ও আইনসংগত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

লাভরভের ভাষণ বর্জন

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে গতকাল রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের রেকর্ড করা ভাষণ প্রচার করা হয়। তিনি ইউক্রেনে হামলার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তবে তাঁর ভাষণের আগেই মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইইউর প্রতিনিধিসহ কয়েক ডজন কূটনীতিক।

নতুন দাবি তুলতে পারে যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদ থেকে রাশিয়াকে বহিষ্কার করার দাবি তোলার কথা বিবেচনা করছে। গতকাল পোল্যান্ড সফররত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

নজিরবিহীন বৈঠকে জাতিসংঘ

ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে নজিরবিহীন বৈঠকে বসেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। ১৯৫৬ সাল থেকে এই পরিষদের এমন জরুরি অধিবেশন মাত্র ১১তম। এই অধিবেশনে চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে ভোটাভুটি হতে পারে ১৯৩ সদস্যের এই পরিষদে।

সূত্র : এএফপি, সিএনএন, বিবিসি ও সিনহুয়া

 

কলমকথা/ বিথী